এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উত্তাল সারাদেশ। বিষয়টি নিয়ে শোবিজ তারকারা শুরু থেকেই কথা বলছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন তারা। এবার নিজের অবস্থান জানালেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে তিনটি ছবির সংযোগে তৈরি একটি ছবি পোস্ট করে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন মেহজাবীন।
তিনি লেখেন, ‘ছোটবেলা থেকে জেনেছি, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করে না। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও কখনো নারীর প্রতি সহিংসতা শেখায়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” হাদীসে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করে।” অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে আজকাল এর ভিন্ন চিত্র, মর্মান্তিক সব ভিডিওচিত্র দেখতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘একজন নয়, দুইজন নয়, আমারই অসংখ্য বোনের ওপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হামলা চালানো হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে। কী নির্মম, কী নৃশংস। ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গে পরে আসছি, তবে আমার অবস্থান থেকে বলব―সর্বোচ্চ কোনো যুক্তির অজুহাতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেয়া যায় না। “না” মানে “না”; কক্ষনো না। ছাত্র-ছাত্রীরা কি-ই বা করেছিল? তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিল। কোটা সংস্কারের দাবি তুলেছিল। তাই তো?’
তিনি লিখেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্বঅধিকারের দাবি যে কেউ তুলতে পারে। কিন্তু তাই বলে নারীর গায়ে হাত তোলা, “আবু সাঈদ”-এর মতো সম্ভাবনাময় তরুণকে হত্যা করা, এসব কি সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে? সমাধানের অন্য কোনো উপায় কি ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? পরিস্থিতি হয়তো আজ কিংবা কাল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হলো, যে পরিবারের মুখের হাসি চলে গেল, আমরা কি সেই শূন্যতা অন্য কিছুর বিনিময়ে পূর্ণ করতে পারব? কক্ষনো না।’
‘ইতিহাস সাক্ষী, শক্তি যত বড়ই হোক, ছাত্র সমাজের ওপর চড়াও হয়ে যুগে যুগে কেউ কখনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তাহলে কেন এই ব্যর্থ আস্ফালন? মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সবসময়ই বুকের ভেতর লালন করি। আমরা গর্ব করি বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দেশে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না, অধিকারের দাবি তোলা যাবে না, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যোগ্যতার পরিচয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা যাবে না, প্রশাসনের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে গেলেই হামলার শিকার হতে হবে, অকাতরে অকাল প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে, এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন? আমার মনে হয় না।’
এ অভিনেত্রী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সময়ের অন্যান্য ইস্যুতেও কথা বলেছেন। তিনি লেখেন, ‘দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে দুর্নীতি, প্রায় সব ইস্যুতেই তো আমরা চুপ থাকি। রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেলেও আমরা নীরবে সয়ে যাই। অপেক্ষা করি, হয়তো একটা না একটা সমাধান আসবে। আজ না হলেও দুদিন পর আসবে। অন্যান্য ইস্যুতে আমরা সামাজিক মাধ্যমেও এতটা সোচ্চার হই না। তাহলে ইদানিং কেন হচ্ছি? কেন কোটা সংস্কার ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছি? কারণ একটাই, কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।’
‘যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই সাধারণ জনগণই কিন্তু মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু ইত্যাদিসহ সরকারের অনেক যুগান্তকারী সাফল্যে গর্বিত হয়ে হাত তালি দিয়েছিলাম। গালভরা প্রশংসা করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার হবার পর আমরা পুনরায় সরকারের পাশে দাঁড়াব। এক পক্ষ হয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
সবশেষ এ অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘ছাত্ররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দমিয়ে না রেখে তাদের যৌক্তিক দাবিতে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আমি মেহজাবীন চৌধুরী আকুল আবেদন করছি। আমার বিশ্বাস, আমরা নিরাশ হবো না।’